শুধু পরিকাঠামোগত উন্নয়ন নয় সেই সঙ্গে মানব সম্পদের উন্নয়ন ঘটানোই হল প্রকৃত উন্নয়ন। বর্তমান রাজ্য সরকার সেই দিশায় কাজ করছে। সরকার নানা পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মানব সম্পদের উন্নয়নেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। আজ দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাব্রুম টাউনহলে জেলার ১৯টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। আজ মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ৩২ কোটি টাকার ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। মুখ্যমন্ত্রী রিমোটে বোতাম টিপে ভার্চুয়ালি এই ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমবায়মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, দক্ষিণ ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি দীপক দত্ত, সাব্রুম নগরপঞ্চায়েতের চেয়ারপার্সন রমা পোদ্দার দে, এমডিসি কংজাং মগ, বিশিষ্ট সমাজসেবী দীপায়ন চৌধুরী, প্রাক্তন বিধায়ক শংকর রায়, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা মহম্মদ সাজ্জাদ পি প্রমুখ।
উদ্বোধকের ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, সারা রাজ্যে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে। আরও অনেকগুলি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের অপেক্ষায়। বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিকশিত ভারত গঠনের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। সকলে মিলে গড়ে তোলা হবে সমৃদ্ধশালী ভারত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, ফায়ার স্টেশন, অফিস গৃহ ইত্যাদি নির্মাণ করা হচ্ছে উন্নয়নের লক্ষ্যে। স্বচ্ছতার মাধ্যমে হচ্ছে উন্নয়নের কাজ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবছর জুন মাস পর্যন্ত রাজ্যে ৬১২ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যালয়ের নতুন পাকা বাড়ি, বিদ্যালয় সংস্কার, অফিস নির্মাণ, স্বাস্থ্য ভবন ইত্যাদি। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে শিক্ষায়। এছাড়াও রাজ্যের জনজাতিদের উন্নয়নেও অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ১৪০০ কোটি টাকা জনজাতিদের উন্নয়নে ব্যয় করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে রাজ্যে। ৯টি সুপার স্পেশালিটি বিভাগ চালু করা হয়েছে। বহিঃরাজ্যের চিকিৎসকগণও রাজ্যে আসছেন। চিকিৎসা পরিষেবা দিচ্ছেন। কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছতার মাধ্যমে ১৯ হাজার সরকারি চাকুরি হয়েছে। অন্যান্যভাবে চাকুরি হয়েছে আরও ৫ হাজার। রাজ্যে ৫৬ হাজার স্বসহায়ক দল গঠন করা হয়েছে। মহিলাদের উন্নয়নে সরকার অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। লাখপতি দিদি, ড্রোন দিদি তৈরি করা হয়েছে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আনারস ও ফল চাষ, রাবার বাগান, মৎস্যচাষ, পশুপালন, পর্যটন এই সব ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো হচ্ছে।
সেইসঙ্গে রাজ্যে নতুন হাসপাতাল, ফিসারী কলেজ, ধম্মদীপা ইন্টারন্যাশন্যাল বুদ্ধিষ্ট ইউনিভার্সিটি স্থাপন, নার্সিং ও প্যারা মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, ওপেন ইউনিভার্সিটি স্থাপন, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ ব্যাপকভাবে চলছে। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থারও অনেক উন্নতি হয়েছে। রাজ্যবাসীর মনে এখন আমার সরকার এই মনোভাব তৈরি হয়েছে।
সমবায়মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া অনুষ্ঠানে বলেন, দক্ষিণ জেলার উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ নজর দিয়েছেন। এখানকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করায় তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডা. মানিক সাহা আজ সাব্রুম দ্বাদশ শ্রেণি বালিকা বিদ্যালয়ের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাসের নবনির্মিত পাকা ভবনের দ্বারোদঘাটন করেন। অনুষ্ঠানে দুইজন নাগরিককে আয়ুষ্মান কার্ড এবং ২ জন নতুন ভোটারের হাতে ভোটার পরিচয়পত্র তুলে দেন। সারুমে বৈশাখী মেলায় প্রকাশিত স্মরণিকা ‘শ্রীচরণেষু’ মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন সাবুম নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারপার্সন রমা পোদ্দার দে।