জনকল্যাণে রূপায়িত বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির সুফল দ্রুত জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে । এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট রূপায়ণকারী দপ্তর এবং সংস্থা সমূহকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে । সচিবালয়ের ২ নং সভাকক্ষে রাজ্যস্তরীয় দিশা কমিটির পর্যালোচনা সভায় একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব । সভায় রাজ্যে রূপায়িত বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প সমূহের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি জনস্বার্থবাহী কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি রূপায়ণের ক্ষেত্রে আগামীর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন । তিনি বলেন , যেসব কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং যেসব কাজ বর্তমানে রাজ্যে চলছে সেইসব উন্নয়নমূলক কাজগুলি আরও বেশি করে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসতে হবে । তিনি বলেন , রাজ্যে রূপায়িত বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে । এরফলে কাজের গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি তৈরি সম্পদের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাবে । পর্যালোচনা সভায় শিক্ষা দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে রাজ্যে রূপায়িত সমগ্র শিক্ষা এবং পিএম পোষণ ( স্কুল মিড ডে মিল ) প্রকল্পের কাজের চিত্র তথ্য পরিসংখ্যানের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন । তিনি জানান , সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পে রাজ্যের প্রত্যেকটি বিদ্যালয়কে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হবে । এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয়গুলিকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনার পাশাপাশি কম্পিউটার পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দপ্তরের আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলেন । এক্ষেত্রে তিনি বিদ্যুৎ দপ্তরের সহযোগিতায় টাস্ক ফোর্স গঠনের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন । সভায় শিক্ষা দপ্তরের সচিব বলেন , রাজ্যের ৮৮ টি বিদ্যালয়ে প্রাক প্রাথমিক সেকশন চালু করা হয়েছে । ৩১২ টি বিদ্যালয়ে আইসিটি রয়েছে । ১৩৫ টি বিদ্যালয়ে বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করা হয়েছে । ৪০০ টি বিদ্যালয়ে সক্ষম ত্রিপুরা প্রকল্প চালু করা হয়েছে । ৪০০ টি বিদ্যালয়কে মডেল স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়েছে যা শিক্ষাক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় । এছাড়াও বিভিন্ন বিদ্যালয় এবং একাডেমিক লিডার / কো – অর্ডিনেটরদের মধ্যে কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ দেওয়া হয় । সভায় শিক্ষায় দপ্তরের সচিব পিএম পোষণ প্রকল্পে রাজ্যের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলের জন্য এলপিজি সংযোগের ব্যবস্থাপনার কথাও উল্লেখ করেন । তিনি বলেন , ৮৪৪ টি বিদ্যালয়ে কিচেন গার্ডেন করা হয়েছে । সভায় বিদ্যুৎ দপ্তরের সচিব রাজ্যে রূপায়িত টিএসইসিএল – এর অধীনে কেন্দ্রীয় প্রকল্প , দীনদয়াল গ্রামজ্যোতি যোজনা , ইন্টিগ্রেটেড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট স্কিম এবং এনএলসিপিআর প্রকল্পের কাজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন । এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সমস্যার দ্রুত সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিবকে বলেন মুখ্যমন্ত্রী । ২ – এর পাতায় পর্যালোচনা সভায় সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ড . সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল রাজ্যে আইসিডিএস এবং সাপ্লিমেন্টারি নিউট্রিশন প্রোগ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে জানান , রাজ্যে বর্তমানে ৫৬ টি আইসিডিএস প্রকল্প চালু আছে । রাজ্যের ৯,৯১১ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ৬ মাস থেকে ৬ বছরের ৩,২৭,৪০৩ জন শিশু এবং ৫৬,২১৮ জন গর্ভবতী মহিলা এবং লেক্টেটিং মাদারস সাপ্লিমেন্টারি নিউট্রিশনের আওতায় রয়েছে । তিনি জানান , ১০,৭৩৫ টি স্মার্ট ফোন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং সুপারভাইজারদের দেওয়া হয়েছে । ৯,৯১১ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ৯,৯১১ টি গ্রোথ মনিটরিং ডিভাইস দেওয়া হয়েছে । প্রথম পর্যায়ে ৩,৮৭৪ টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে এলপিজি সংযোগ দেওয়া হয়েছে । এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ভাতা ইত্যাদি নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয় । সভায় নগর উন্নয়ন দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে রাজ্যে রূপায়িত কেন্দ্রীয় প্রকল্প সমূহ নিয়ে আলোচনা করেন । তিনি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ( আরবান ) প্রকল্পে রাজ্যের নগর সংস্থা এলাকার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন । এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিরাই যাতে এই প্রকল্পে ঘর পেতে পারেন সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দপ্তরকে বলেন । বাড়ি বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের বিষয়টি তুলে ধরে সচিব জানান , এর ফলে মহিলা পরিচালিত স্বসহায়ক দলগুলিও আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছেন । তিনি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মাধ্যমে রাজ্যে বিভিন্ন সড়ক নির্মাণের কাজের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন । এছাড়াও জাতীয় সড়ক নির্মাণ কাজের অগ্রগতি নিয়েও সভায় আলোচনা হয় । সভায় জলজীবন মিশন এবং স্বচ্ছ ভারত অভিযান ( গ্রামীণ ) নিয়ে আলোচনা করেন পানীয়জল ও স্বাস্থ্য বিধান দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে । তিনি জানান , রাজ্যে জলজীবন মিশনে এখন পর্যন্ত ৪৮.৯৯ শতাংশ বাড়িতে ট্যাপের মাধ্যমে পানীয়জলের সংযোগ চালু রয়েছে । এছাড়াও স্বচ্ছ ভারত মিশন ( গ্রামীণ ) গোবরধন প্রকল্প , কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাফল্য ইত্যাদি বিষয়েও আলোকপাত করেন নগর উন্নয়ন দপ্তরের সচিব । সভায় কৃষি দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায় রাজ্যে রূপায়িত রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা , পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনা , প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিঞ্চাই যোজনা , প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা প্রভৃতি কাজের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন । এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন , কৃষকদের সুবিধার্থে কৃষক কল্যাণ প্রকল্পগুলির সুফল যাতে কৃষকরা পায় সেই দিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করতে হবে । এছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন অর্থকরী ফসলগুলির সঠিক প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নিতে হবে । পর্যালোচনা সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব অভিষেক চন্দ্রা , খাদ্য দপ্তরের সচিব শরদিন্দু চৌধুরী দপ্তরের রূপায়িত কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন । এদিনের সভায় উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা , সমবায় দপ্তরের মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল , মুখ্যসচিব কুমার অলক , প্রধান সচিব জে কে সিনহা সহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান সচিব ও সচিবগণ উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন ।