উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের ৭২তম প্লেনারি সেশন উপলক্ষে আজ আগরতলার হোটেল পোলো টাওয়ারে উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন (ডোনার) প্রতিমন্ত্রী ড. সুকান্ত মজুমদারের সভাপতিত্বে প্রি- প্লেনারি থিমেটিক ও টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল প্রজ্ঞাভবনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হবে উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের প্লেনারি সেশন। প্রি-প্লেনারি ও টেকনিক্যাল সেশনে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের আধিকারিকগণ, এনইসির সদস্য, উত্তর পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলির মুখ্যসচিব এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন। এই সেশনে উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছে, যা এই অঞ্চলের বিকাশকে আরও ত্বরান্বিত করবে।
প্রি-প্লেনারি সেশনে ডোনার প্রতিমন্ত্রী ড. সুকান্ত মজুমদার উত্তর পূর্বাঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল শুধুমাত্র দেশের ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নয়, এই অঞ্চল জাতির বৈচিত্র্য, সংস্কৃতি ও কৌশলগত গুরুত্বেরও প্রতীক। তিনি আরও বলেন, এই অঞ্চলের অনন্য ভৌগোলিক অবস্থান চিন, মায়ানমার, বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপালের সংযোগস্থলে একটি আঞ্চলিক সংযোগ, বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য ভারতের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু হিসেবে কাজ করে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিকাশে উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ডোনার এই অঞ্চলের জন্য সুসংহত, টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির দর্শন বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ডোনার মন্ত্রক উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রতি ভারত সরকারের প্রতিশ্রুতির একটি মাইলফলক। এই অঞ্চলের বিশেষ চ্যালেঞ্জগুলি সমাধান করার প্রয়োজনীয়তা থেকেই এই ডোনার মন্ত্রকের সূচনা হয়েছিল।
প্রি-প্লেনারি সেশনে কেন্দ্রীয় ডোনার প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে গত কয়েক বছরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ও বিনিয়োগ হয়েছে। গত দশকে এই অঞ্চলে বিমান, রেল ও জলপথের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উত্তর পূর্ব বিশেষ পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০০ শতাংশ কেন্দ্রীয় সহায়তা প্রদান করা হয়। যা উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য সরকারগুলির পানীয়জল সরবরাহ, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, পর্যটন ও সামাজিক পরিকাঠামো প্রকল্পগুলির জন্য বিশেষ সহায়ক হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশে পরিকল্পনা করা হয়েছে যে, প্রতি ১৫ দিনে একবার একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে পরিদর্শনে যাবেন। যাতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা যায়। তিনি বলেন, জানুয়ারি, ২০২৩ থেকে মার্চ, ২০২৪ পর্যন্ত ৭৪ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ১৫৭ বার উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি পরিদর্শন করেছেন। এই পরিদর্শনগুলির সময় স্থানীয় জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও মনোভাব অনুধাবন করে সাহায্য করেছে এবং সরকারের প্রকল্পগুলির কার্যকর বাস্তবায়নে সহায়ক হচ্ছে।
প্রি-প্লেনারি সেশনে ডোনার প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রক, রাজ্য সরকার ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের যৌথ প্রচেষ্টায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিকাশের পূর্ণ সম্ভাবনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
এক্ষেত্রে সীমান্ত বাণিজ্য পথের উন্নয়ন, স্মার্ট সিটি, ডিজিটাল পরিকাঠামো, কৃষিভিত্তিক শিল্পের প্রসার, বাজারজাতকরণের সুযোগ বৃদ্ধি ও টেকসই চাষাবাদের পদ্ধতি বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রি-প্লেনারি থিমেটিক ও টেকনিক্যাল সেশনে আলোচনায় সন্তোষ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকের থিমেটিক সেশনে উপস্থাপনা ও আলোচনাগুলি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। আগামীকালের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের সময় উপস্থিত স্টেকহোল্ডারদের আহ্বান জানাবো তারা যেন চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একসঙ্গে কাজ করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রক এবং রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলে আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ইকোসিস্টেম তৈরি করি।
সেশনে ডোনারের সচিব চঞ্চল কুমার বলেন, আজকের প্রি-প্লেনারি সেশনে বিভিন্ন মন্ত্রকের উপস্থাপনাগুলি তথ্যবহুল এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদের সচিব অংশুমান দে প্রি-প্লেনারি সেশনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, এনইসির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রয়োজন, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। যা দীর্ঘদিন ধরে ভারত সরকার এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য সরকারগুলির নীতিমালা ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সহায়ক হয়েছে। টেকনিক্যাল সেশনে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এইক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে যা উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত করার জন্য ন্যাশনাল পাম অয়েল মিশন এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলকে পাম অয়েল আবাদ বৃদ্ধির জন্য ব্যবহারের সুযোগ, ফোর-জি স্যাচুরেশন প্রকল্প (রাজ্য নির্ভরতা), আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, অবিদ্যুতায়িত গ্রাম, সড়ক যোগাযোগ এবং পিএম ইলেকট্রিক ড্রাইভ রেভুলেশন। সেশনে পাম অয়েল উৎপাদনের সম্ভাবনার উপর গুরুত্ব আরোপ করে এনইসির সচিব বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের ভূমিকা ভোজ্য তেল উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাম তেল উৎপাদনের সুযোগ উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৬টি রাজ্যে রয়েছে। এই রাজ্যগুলি হলো অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা। এই রাজ্যগুলিতে ৮.৪ হেক্টর সম্ভাব্য এলাকা রয়েছে যেখানে জাতীয় সম্ভাবনার ৩৮ শতাংশ পাম তেল উৎপাদন করা যাবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এই সব রাজ্যে ৩০টিরও বেশি নার্সারি স্থাপন করা হয়েছে। এই নার্সারিগুলির ধারণ ক্ষমতা ৩০ লক্ষ পাম অয়েল গাছের চারা।