আদিবাসী সমাজের বৈচিত্র আমাদের মহান দেশকে একসূত্রে বেঁধে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। আদিবাসী সমাজের বিভিন্ন প্রথা ও পরম্পরা সমূহ সমস্ত বিশ্ব মেনে নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের যে বিষয়টি আজ আমাদের সামনে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে তা আসত না। প্রকৃতি এতটা আমাদের উপর রুষ্ট হত না। আজ সকালে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে রাজ্যভিত্তিক জনজাতীয় গৌরব দিবস অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ও উত্তর- পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া একথা বলেন। উল্লেখ্য, সমগ্র দেশে আজ ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে যথাযথ মর্যাদায় জনজাতীয় গৌরব দিবস উদযাপন করা হয়। মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বিহারের জামুইতে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। মূল অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, বিহারের রাজ্যপাল রাজেন্দ্র বিশ্বনাথ আরলেকর ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার উপস্থিত ছিলেন।
আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে রাজ্যভিত্তিক জনজাতীয় গৌরব দিবসের উদ্বোধন করে কেন্দ্রীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেন, সমগ্র দেশবাসীর জন্য আজ এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৫০ বছর আগে জন্মেও ভগবান বিরসা মুন্ডা আজও কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ১৪০ কোটি দেশবাসীর কাছে প্রেরণা। তিনি বলেন, আমাদের সমাজের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। জনজাতিদের ভূমিকার মূল্যায়ন ছাড়া আমাদের ইতিহাস অসম্পূর্ণ। ভারতের স্বাধীনতার লড়াইয়ে জনজাতি সম্প্রদায়ের অনেকেই তাঁদের রক্ত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে সমগ্র দেশেই এক পরিবর্তন এসেছে। যাদের নিয়ে কেউ চিন্তা ভাবনাও করত না তাদের সম্মান দেওয়ার কাজ তখন থেকে শুরু হয়েছে। এর আগ পর্যন্ত আদিবাসীদের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখা হচ্ছিল।
নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পর থেকে বিরসা মুন্ডার অবদানকে যেমন স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তেমনি মন্ত্রী, রাজ্যপালের মতো সম্মানজনক পদে বিভিন্ন রাজ্যের আদিবাসী সমাজের বিশিষ্টদের মনোনিত করা হচ্ছে। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম আদিবাসী সমাজের মধ্য থেকে কাউকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে। তিনি বলেন, সমগ্র দেশেই জনজাতীদের কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করে কাজ করা হচ্ছে। সমগ্র দেশে ১২ হাজার আদিবাসী গ্রামের জন্যে ২৪ হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছে। আদিবাসীদের ঘরে ঘরে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয়জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। তাদের লেখাপড়ার জন্যে বিভিন্ন জায়গায় একলব্য স্কুল খোলা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে রাজ্যের জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা বলেন, ভগবান বিরসা মুন্ডার জন্মজয়ন্তীকে সামনে রেখে আজ থেকে জনজাতিদের কল্যাণে বর্ষব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। তিনি বলেন, জনজাতিদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের জন্যে রাজ্য সরকার নানাভাবে কাজ করে চলেছে। নতুন কর্মসূচি নেওয়ার পাশাপাশি বর্তমানে চলা প্রকল্পগুলি রূপায়ণের দিকেও বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছে। জনজাতিদের গুণগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টির উপরও রাজ্য সরকার গুরুত্ব সহকারে কাজ করছে। বিকশিত ভারত গঠনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লক্ষ্যমাত্রাকে সফল করে তোলার জন্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে তিনি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে জনজাতিদের উন্নয়ন সম্পর্কিত ২,২৭৮ লক্ষ টাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রকল্পের বেনিফিসিয়ারিদের সংবর্ধনা এবং তাদের হাতে চেক তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, সাংসদ কৃতি দেবী দেববর্মণ, উপজাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে, দপ্তরের অধিকর্তা শুভাশিস দাস, কেন্দ্রীয় সরকারের যুগ্ম সচিব জ্যোতিন্দ্র প্রসাদ প্রমুখ।