রাজ্যে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় প্রাণীসম্পদ বিকাশ ও মৎস্যচাষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দুটি দপ্তরের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাণীসম্পদ বিকাশ ও মৎস্য দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার একথা জানান। তিনি জানান, জলাশয়গুলির জল উপচে পড়ায় এবং বিভিন্ন পুকুরের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এই বন্যায় ১৯,৮৭৪৮১৫ হেক্টর অ্যাকুয়া কালচার জল এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১,৩০,৮৩২ জন চাষি এরফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যে চারটি জেলায় মাছচাষের এলাকা এবং কৃষকগণ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেগুলি হচ্ছে উনকোটি, গোমতী, দক্ষিণ ত্রিপুরা এবং সিপাহীজলা জেলা। বিভিন্ন জলাশয় থেকে ৫২,৪০৯.৪৩৫ এমটি মাছ বন্যার জলে ভেসে গেছে। ২,১৭,২০,১০৫ লক্ষ মাছের পোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে সমগ্র রাজ্যে এই বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১,৩৪৭.৬৬ কোটি টাকা।
মৎস্য দপ্তরের সচিব জানান, প্রবল বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে দপ্তরের কর্মীগণ বিভিন্ন পুকুর ও কৃষকদের ফার্ম পরিদর্শন করে পুকুর থেকে মাছ যাতে ব্যাপক পরিমাণে ভেসে না যায় সে ব্যাপারে কৃষকদের সহায়তা করেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে তারা বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের সাধ্যমত সাহায্য করেছেন। কৃষকদের উদ্ধারের কাজেও তারা এনডিআরএফ-এর সদস্যদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করেছেন। দপ্তরের সচিব জানান, বন্যা পরবর্তী সময়ে দপ্তরের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্য একটি সমীক্ষা চালানো হয়। বন্যা পরবর্তী সময়ে জলাশয়ের মাছ যাতে রোগাক্রান্ত না হয় সেজন্য দপ্তরের পক্ষ থেকে সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। পূর্ণ উদ্যমে মাছচাষের কাজে নেমে পড়ার জন্য দপ্তরের পক্ষ থেকে মৎস্যচাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্পে কৃষকদের মধ্যে মাছের পোনা বিতরণ করা হচ্ছে। কৃষকদের জন্য মাটি এবং জল পরীক্ষা শিবির করা হয়েছে। কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের (কেসিসি) মাধ্যমে কৃষকদের ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কগুলির কাছে প্রয়োজনীয় নথি পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও কৃষকদের কীভাবে আরও সহায়তা প্রদান করা যায় সে বিষয়টি দেখার জন্য মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকগণ বিভিন্ন জেলা সফর করছেন।
প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব দীপা ডি নায়ার জানান, এবারের বন্যায় প্রাণীসম্পদ বিকাশের ক্ষেত্রে ২৩.৩৪ কোটি টাকা আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানান, প্রবল বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে সমগ্র রাজ্যে ২৪৪টি গবাদি পশুর ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এই শিবিরগুলি এখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত জায়গায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেখানে এখন পর্যন্ত ১৪.৫ টন গ্রিন ড্রাই ফডার সহ ৬৫.০০ টন পশুর খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।
আজ পর্যন্ত ৫১২টি শিবিরের মাধ্যমে বিভিন্ন পশুর চিকিৎসা করা হয়েছে। গবাদি পশুর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৪০৪০ ১টি গবাদি পশু এবং ৫৪৫০৬টি পাখির চিকিৎসা করা হয়েছে। বন্যার ভয়াবহতা থেকে বেরিয়ে এসে প্রাণীপালকগণ যাতে ফের নতুন উদ্যমে প্রাণীপালনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন সেজন্য তাদের ফডার প্ল্যান্টিং মেটেরিয়েলস এবং বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি জানান, গবাদি পশুর ক্ষেত্রে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করার জন্য ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্পেশাল রিলিফ প্যাকেজ হিসেবে ৫.০০ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পে প্রাণীপালকগণ যাতে সহায়তা পেতে পারেন সে বিষয়ে দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব জানান, প্রাণীসম্পদ বিকাশের ক্ষেত্রে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দপ্তরের পক্ষ থেকে ২০.৩৩ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ত্রাণ, পুনর্বাসন এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কাছে পেশ করা হয়েছে। তিনি জানান, যে সমস্ত গবাদি পশুপালক এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ‘মুখ্যমন্ত্রী প্রাণীসম্পদ বিকাশ যোজনা’র মাধ্যমে সহায়তা করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাণীপালকগণ যাতে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের (কেসিসি) মাধ্যমে ঋণ পেতে পারেন সেজন্যও প্রয়োজনীয় সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে।