Saturday, October 19, 2024
বাড়িখবররাজ্যরাজ্য ও দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে গেলে কৃষি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে...

রাজ্য ও দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে গেলে কৃষি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বললেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী

ভারতবর্ষের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল । আমাদের রাজ্যও কৃষি নির্ভরশীল । যেকোন রাজ্য ও দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে গেলে কৃষি ক্ষেত্রকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে । আজ বিধানসভায় বিধায়ক অরুন চন্দ্র ভৌমিকের আনিত বেসরকারি প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় একথা বলেন । বিধায়ক অরুন চন্দ্র ভৌমিকের আনিত বেসরকারি প্রস্তাবটি ছিল ‘ কৃষি শস্য উৎপাদনে ত্রিপুরা রাজ্যকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর আরও সক্রিয়তার সঙ্গে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করুক ‘ । এই বেসরকারি প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় আরও বলেন , রাজ্যকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে রাজ্যের কৃষি দপ্তর বিগত দিনগুলিতে ১০ বর্ষীয় প্রেক্ষীত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল । পরবর্তী সময়ে ১০ বর্ষীয় প্রেক্ষীত পরিকল্পনা আরও ২ বছর ( ২০১১-১২ পর্যন্ত ) বৰ্দ্ধিত হওয়ার পর খাদ্য শস্যের ঘাটতি মেটাতে এবং খাদ্য শস্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত একটি এগ্রিকালচার রোড ম্যাপও তৈরি করা হয়েছে । কিন্তু রাজ্যের কৃষি জমির পরিকল্পনাহীন ব্যবহার , কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অপ্রতুলতা এবং কৃষি উন্নয়নে রাজ্য বাজেট থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না করায় লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি । এরফলে বিশাল পরিমাণ বরাদ্দকৃত অর্থ অব্যয়িত রয়ে গেছে । শুধু তাই নয় , পূর্ববর্তী সরকার কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করে তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করার কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা সদিচ্ছাও দেখায়নি । কৃষিমন্ত্রী বলেন , বর্তমান রাজ্য সরকার ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর খাদ্য শস্যের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর এবং রাজ্যকে খাদ্যে স্বয়ম্ভর করার পাশাপাশি কৃষি এবং কৃষকদের আর্থ সামাজিক অবস্থার সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয় । দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেন । এজন্য সর্বপ্রথম কৃষিক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয় । ২০১৬-১৭ সালে কৃষি দপ্তরের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪০৩ কোটি ৮ লক্ষ ২১ হাজার টাকা । ২০১৭-১৮ সালে কৃষি দপ্তরের বাজেট বরাদ্দ ছিল ৩৩০ কোটি ৯২ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা । ২০১৮-১৯ সালে ছিল ৫০৮ কোটি ৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা । ২০১৯-২০ সালে ছিল ৫১৩ কোটি ৪৮ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা । ২০২০-২১ সালে বাজেট বরাদ্দ হয় ৪৫৮ কোটি ৮০ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা । ২০২১-২২ সালে বাজেট বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৪৯৫ কোটি ৩৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা । অর্থাৎ বর্তমান অর্থবছরে ২০১৭-১৮ সালের তুলনায় কৃষিক্ষেত্রে বাজেট বৃদ্ধির হার ৫০ % । কৃষিমন্ত্রী বলেন , ২০১৫-১৬ সালে যেখানে রাজ্যের কৃষকদের গড় মাসিক আয় ছিল ৬,৫৮০ টাকা , তা ২০২২-২৩ সালের মধ্যে ১৩,৫৯০ টাকায় পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার একটি ৩ বর্ষীয় পরিকল্পনা ( ২০২০-২১ থেকে ২০২২-২৩ ) গ্রহণ করেছে । ২ য় পাতায় কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কৃষক কল্যাণমুখী প্রকল্প যেমন খাদ্য শস্যের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি , শস্য বৈচিত্রের মাধ্যমে অধিক অর্থকরী ফসল চাষ , শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষের এলাকা সম্প্রসারণ , উন্নতমানের বীজ বিতরণ , পর্যাপ্ত রাসায়নিক ও জৈব সারের যোগান , জলসেচ ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ , জৈব চাষের এলাকা বৃদ্ধি , প্রাকৃতিক চাষে গুরুত্ব আরোপ , উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ , ফার্মার প্রডিউসার অর্গানাইজেশন গঠন , কৃষি বাজারগুলির উন্নয়ন , প্রতিটি কৃষি মহকুমায় ১ টি করে কৃষক বন্ধু কেন্দ্র স্থাপন , কৃষি প্রশিক্ষণ , উৎপাদিত ফসলের বাজারজাতকরণ , বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প যেমন প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি , প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা , কিষাণ ক্রেডিট কার্ড , সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয়ের মাধ্যমে সরাসরি কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রদান , কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ , রাজ্যের গ্রামীণ বাজারগুলির উন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ , উৎপাদিত ফসলের সঠিক বাজারজাতকরণ , মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে জমিতে রাসায়নিক এবং জৈবসার প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়গুলিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হয় । এর মুখ্য উদ্দেশ্যই হল রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা । রাজ্যের কৃষকদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে রাজ্যের কৃষি জমির সঠিক ব্যবহার , সঠিক সময়ে কৃষকদের বিভিন্ন কৃষি উপকরণ পৌঁছে দেওয়া , বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যস্তরের প্রকল্পগুলির সুবিধা সরাসরি কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । কৃষিমন্ত্রী বলেন , আত্মনির্ভর পরিবার প্রকল্পের আওতায় ‘ মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনার অধীনে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে মোট ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৪৫৬ কৃষক পরিবারকে মোট ২৬ লক্ষ ৯৪ হাজার ৭৭৭ টি সুপারি , লেবু , কলা এবং পেঁপে চারা বিতরণ করা হয়েছে । একই সাথে ২ লক্ষ ৪১২ কৃষি পরিবারকে বিভিন্ন উন্নত জাতের সব্জি বীজের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে । আত্মনির্ভর পরিবার প্রকল্পের অধীন ‘ মুখ্যমন্ত্রী পুষ্প উদ্যান প্রকল্প ‘ নামে একটি প্রকল্প আগামী তিন বছরের জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে । বেসরকারি প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন , বর্তমান সরকারের সময়ে গত ৪ বছরে কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন কল্যাণমুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । এতে সাফল্য এসেছে । কৃষকদের সঠিক সময়ে উন্নতমানের বীজ সরবরাহের জন্য রাজ্য পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান করা হয়েছে । বিগত দুটি বছরে কোভিড অতিমারীর প্রভাব সত্বেও কৃষকদের স্বার্থে মোট ৪৯ হাজার মেট্রিকটন বিভিন্ন ধরণের সার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে । প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তর থেকে যেসকল পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরে বলেন , রাজ্যের মোট খাদ্য শস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাকে ২০১৭-১৮ সনের ৮ লক্ষ ৫৫ হাজার মেট্রিকটন থেকে বাড়িয়ে ২০২২-২৩ সালের মধ্যে ৯ লক্ষ ৪৮ হাজার মেট্রিকটনে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে । ২০২০-২১ সালে রাজ্যে খাদ্য শস্যের মোট উৎপাদন ছিল ৮ লক্ষ ৬৮ হাজার মেট্রিকটন । রাজ্যে এখন প্রায় ৭২,০০০ হেক্টর জমিতে শ্রী পদ্ধতিতে ধান চাষ হচ্ছে । খাদ্য শস্যের এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ১ লক্ষ হেক্টর ধান জমিকে চিহ্নিত করে উচ্চফলনশীল জাতের ধান শ্রী পদ্ধিতিতে চাষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে , যাতে কানি প্রতি অন্তত ১২০ কেজি ফলন বাড়িয়ে কৃষকদের আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনার কাজ চলছে ।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

15 + two =

- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য