নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পে শ্রম দপ্তর এখন পর্যন্ত রাজ্যের ১০ হাজার ৯৫ জন নির্মাণ শ্রমিককে বিভিন্ন সহায়তা দিয়েছে। নির্মাণ শ্রমিকদের বিভিন্ন ক্ষেত্রের আর্থিক সহায়তার পরিমাণও বিগতদিনের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রমমন্ত্রী টিংকু রায় একথা জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি শ্রম, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরেরও সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন। সাংবাদিক সম্মেলনে শ্রম দপ্তরের সাফল্য তুলে ধরে তিনি জানান, “মুখ্যমন্ত্রী চা শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পে’ এখন পর্যন্ত ২ হাজার চা শ্রমিক পরিবারের মধ্যে জমি বন্টন করা হয়েছে। বিভিন্ন চা বাগানে কর্মরত চা শ্রমিকদের দুর্গাপূজার বোনাস প্রদানের জন্য চা বাগানের মালিকদের সঙ্গে শ্রম দপ্তরের আধিকারিকদের সভাও করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানীতে আউট সোর্সিং হিসেবে কর্মরত শ্রমিকদের দুর্গাপূজার বোনাস প্রদানের বিষয়ে দপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও আলাপ আলোচনা করেছে।তিনি জানান, নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১৩৫ জন মহিলা নির্মাণ শ্রমিককে বিবাহের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ৬,৯৬০ জন নির্মাণ শ্রমিককে শিক্ষাক্ষেত্রে সহায়তা, ৫ জন গর্ভবর্তী নির্মাণ শ্রমিককে আর্থিক সহায়তা, ৬০ জন নির্মাণ শ্রমিককে চিকিৎসার সহায়তা, ২,৮৬৫ জনকে পেনশনের সুবিধা প্রদান করেছে দপ্তর। শ্রমমন্ত্রী জানান, রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের শ্রমিকদের নানা সুবিধা প্রদানে শ্রম দপ্তর আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। আগামীদিনে শ্রমিকদের কল্যাণে শ্রম দপ্তর ভ্রাম্যমান স্বাস্থ্য পরিষেবা ও জিবি হাসপাতালে লেবার শেড তৈরী করার পরিকল্পনাও নিয়েছে।সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে সমাজকল্যাণমন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, রাজ্যে নতুন ২৩৪টি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র তৈরী করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৪টি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র ব্লু পুনর্বাসন এলাকায় তৈরী করা হয়েছে। এছাড়াও ধলাই জেলার ২০০টি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রকে সক্ষম অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলোতে স্মার্ট ক্লাসের নানা সুবিধা প্রদান করা হবে। তিনি জানান, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তর রাজ্যের সমস্ত অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলোকে গ্রেডিং করেছে। যেসমস্ত অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলোতে ৮০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উপস্থিত থাকে সেগুলোকে ‘এ’ গ্রেডিং, ৫০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি থাকে সেগুলোকে ‘বি’ গ্রেডিং, ৪০ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি থাকে যে অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলোতে সেগুলোকে ‘সি’ গ্রেডিং দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রগুলোকে সুষ্টভাবে পরিচালনার জন্য একটি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, অভিভাবক সহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে।সাংবাদিক সম্মেলনে সমাজকল্যাণমন্ত্রী জানান, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী ও হেল্পারদের শাড়ি ও পাছড়া কেনার জন্য দপ্তর অর্থ মঞ্জুরীও দিয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়কালে এখন পর্যন্ত ৩৩৪ জন অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী এবং ১৭৬ জন হেল্পার নিয়োগ করেছে দপ্তর। এছাড়াও ১০০ জন অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী যাদের প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা রয়েছে তাদের প্রমোশন দিয়ে অঙ্গনওয়াড়ী সুপার ভাইজার করা হয়েছে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী শ্রীরায় জানান, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের জুভেনাইল জাস্টিস ফান্ড থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ জন শিশুকে চিকিৎসার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৭২৬ জন দিব্যাঙ্গজনকে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, ২০৩৬ জন এইচআইভি রোগীকে মাসিক ২ হাজার টাকা করে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে, ২৮৬৫ জন ক্যান্সার রোগীকে মাসিক ২ হাজার টাকা করে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে এবং সিঙ্গেল পেরেন্টস রয়েছে এমন শিশুদেরও দপ্তরের মাধ্যমে মাসিক ৪ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।সাংবাদিক সম্মেলনে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের সাফল্যের তথ্য তুলে ধরে ক্রীড়ামন্ত্রী জানান, ক্রীড়া দপ্তরের উদ্যোগে ধলাই জেলার আমবাসাতে একটি নতুন যুব আবাস তৈরী করা হয়েছে, যার শীঘ্রই উদ্বোধন করা হবে। নেতাজী সুভাষ রিজিওন্যাল কোচিং সেন্টারের (এনএসআরসিসি) ইন্ডোর হলকে অত্যাধুনিকভাবে গড়ে তোলার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। উদয়পুর এবং কৈলাসহরে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দু’টি যুব আবাসন তৈরী করা হবে এবং শান্তিরবাজারে একটি ফুটবল স্টেডিয়াম গড়ে তোলা হবে। তিনি জানান, খেলো ইন্ডিয়া প্রকল্পে বাধারঘাট স্টেডিয়ামে হকির সিন্থেটিক কোর্ট এবং পানিসাগরে সিন্থেটিক টার্ফ ফুটবল মাঠের কাজ আগামী ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দপ্তর কাজ করছে।সাংবাদিক সম্মেলনে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের অধিকর্তা সত্যব্রত নাথ, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা স্মিতা মল এবং শ্রম কমিশনার ধনবাবু রিয়াং উপস্থিত ছিলেন।