রাজ্যে অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে জনপ্রিয় করতে জম্পুইহিল, ডম্বুর জলাশয় ও ছবিমুড়ায় একাধিক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে প্যারামোটোরিং, প্যারাগ্লাইডিং, হট এয়ার বেলুন, রক ক্লাইম্বিং, রেপিলিং, বর্মা ব্রিজ, ক্যায়াকিং, জিপ লাইন ও ওয়াটার স্পোর্টস। আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এ সংবাদ জানান। সাংবাদিক সম্মলনে পর্যটন দপ্তরের অগ্রগতি ও সাফল্য তুলে ধরে পর্যটনমন্ত্রী জানান, রাজ্য সরকার পর্যটনকে রাজ্যের বিকল্প অর্থনীতির উৎস হিসেবে তুলে ধরার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে ত্রিপুরাকে একটি বিশ্বমানের পর্যটন ক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্যে পর্যটন দপ্তর বহুমুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। পর্যটনের বিকাশে রাজ্যের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলিকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যটনমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে আগরতলা, সিপাহীজলা, মেলাঘর, উদয়পুর, অমরপুর, মন্দিরঘাট, তীর্থমুখ, নারকেলকুঞ্জ, ডম্বুর, আমবাসা, বড়মুড়া ইত্যাদি ১১টি পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরজন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন মন্ত্রক স্বদেশ দর্শন-১ প্রকল্পে ৮২ কোটি ৮৪ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা মঞ্জুর করেছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ৭৩ কোটি ৭৪ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে এবং কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯৭ শতাংশ। এছাড়া স্বদেশ দর্শন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন মন্ত্রক ৫০ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কমলপুরের সুরমা ছড়া ওয়াটার ফলস, জোলাইবাড়ির আভাংছড়াস্থিত শহীদ ধনঞ্জয় স্মৃতি উদ্যান, বিলোনীয়ার চোত্তাখলায় ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উদ্যান, নীরমহল, বক্সনগরস্থিত বৌদ্ধস্তুপ, জম্পুইহিল ইত্যাদি পর্যটন স্থানগুলিকে নতুন কলেবরে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। পর্যটনমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রসাদ প্রকল্পে রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র উদয়পুরের “মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরকে’ বহুমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে বিশ্ব পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরকে একটি আধ্যাত্মিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে এবং দেশ বিদেশের পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের পর্যটন মন্ত্রক ‘প্রসাদ’ প্রকল্পে ৩৭ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ২১ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্যের পর্যটন শিল্পকে আরও আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে পর্যটন দপ্তর ৪৯টি লগহাট নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে আমবাসায় ৩টি, বড়মুড়া ইকোপার্কে ৫টি, সিপাহীজলায় ৫টি, টেপানিয়া ইকোপার্কে ৩টি এবং নারিকেলকুঞ্জে ১৫টি লগহাট ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে। এছাড়াও নারকেলকুঞ্জে ৮টি এবং ছবিমুড়ায় ১০টি লগহাট নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পর্যটনমন্ত্রী জানান, সারা দেশের মধ্যে ত্রিপুরাকে পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এবং পর্যটকদের জলপথের ভ্রমণকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে জলাশয় ও নদী কেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে পর্যটন দপ্তর। সেইলক্ষ্যে ছবিমুড়ায় ৮টি, মহারাণীতে ২টি এবং ডম্বুর জলাশয়ে ৪টি ২০ আসন বিশিষ্ট মোটর বোট / স্পিড বোট দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ডম্বুর জলাশয়ে, নারিকেলকুঞ্জে গন্ডাছড়ায়, লক্ষ্মীনারায়ণ দীঘিতে এবং উদয়পুরের মহাদেব দীঘিতে দ্রুতগামী ওয়াটার স্কুটার / স্কি পর্যটকদের বিনোদনের জন্য দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, দেশ বিদেশের পর্যটকরা ডম্বুর জলাশয়ের নৈসর্গিক ভ্রমণ দ্রুত সম্পন্ন করতে ডম্বুর জলাশয়ের নারিকেলকুঞ্জে হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ‘ত্রিপুরা হাওয়াই সফর’ নামে একটি প্যাকেজ ট্যুরও চালু করা হয়েছে। পর্যটনমন্ত্রী জানান, হোটেল ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাটারিং টেকনোলজি পড়তে আগ্রহী রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আগরতলার অদূরে আনন্দনগরে স্টেট ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্ট শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে, যার উদ্বোধন গত ১৮-১২-২০২২ তারিখে দেশের প্রধানমন্ত্রী করেছেন। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ২টি ডিগ্রি ও ৫টি ডিপ্লোমা কোর্সে পঠন পাঠনের সুযোগ রয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যটনমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৪০ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ‘পুষ্পবন্ত প্রাসাদ’ ও ‘দরবার হল’কে মহারাজা বীরেন্দ্র কিশোর মাণিক্য মিউজিয়াম ও কালচারাল সেন্টার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরজন্য কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই মিউজিয়াম গ্রান্ট স্কিমে ১০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। বাকি অর্থ প্রদান করবে রাজ্য সরকার। পর্যটনমন্ত্রী জানান, রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে পর্যটন দপ্তর ‘পর্যটন সহায়ক প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২৫৫ জন যুবক যুবতীকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদানের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন ব্যাংকে সুপারিশ করা হয়েছে। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২২ জনকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটন ক্ষেত্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রায় ১৮০ কোটি টাকার ঋণ প্রদানে সম্মত হয়েছে বলে পর্যটনমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও পর্যটন দপ্তরের সচিব উত্তম কুমার চাকমা এবং অধিকর্তা তপন দাস উপস্থিত ছিলেন।