জনগণের জীবন ও সম্পদের সুরক্ষা প্রদানই হচ্ছে পুলিশের মূল উদ্দেশ্য। তাই পুলিশই জনগণের কাছে হয়ে উঠেছে সুরক্ষা ও আস্থার প্রকৃত আশ্রয়স্থল। আজ অরুন্ধতীনগরস্থিত মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতি স্টেডিয়ামে ত্রিপুরা পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা শহীদ স্মারকে পুষ্পস্তবক প্রদান করে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার উন্নয়নে পুলিশ প্রশাসন দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করছে। ফলে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থাও অনেক বেড়েছে। এই আস্থা ও বিশ্বাস থেকে যাতে কখনও বিচ্যুতি না ঘটে তারজন্য পুলিশকে সবসময় সচেষ্ট থাকতে আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশের কাজকর্মের মাধ্যমেই রাজ্যের উন্নয়নের ছবি প্রতিফলিত হয়। বিগত কয়েক বছরে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ২০২১ সালে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্যে দেশের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা পঞ্চম সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে। আর এই কাজটি পুলিশ প্রশাসনের সার্বিক প্রচেষ্টার ফলেই সম্ভব হয়েছে। রাজ্যের মা-বোনদের নিরাপত্তা প্রদানে রাজ্যে বর্তমানে ৮টি মহিলা থানা চালু রয়েছে। প্রতিটি থানাতেই ২৪x৭ মহিলা হেল্প ডেস্ক চালু রয়েছে। ফলে রাজ্যের মা-বোনেরা দিনরাত নিশ্চিন্তে চলাফেলা করতে পারছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য পুলিশ প্রশাসনে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। তাদের শুধু লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান প্রয়োজন। রাজ্যের টিএসআর জওয়ানদের উৎকর্ষতার পরিচিতি সারা দেশেই রয়েছে। বিভিন্ন রাজ্য থেকেই টিএসআর জওয়ানদের নিরাপত্তার কাজে লাগাতে রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। দিল্লি সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে টিএসআর জওয়ানরা সুনামের সঙ্গে কর্তব্য পালন করছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার ত্রিপুরাকে নেশামুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এই কাজে পুলিশের আন্তরিক প্রয়াসের ফলে রাজ্য থেকে প্রচুর নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা সম্ভব হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের থানাগুলির বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণেও সরকার আন্তরিক। পুলিশের সুখ স্বাচ্ছন্দের বিষয়টি সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। পুলিশ ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমেই এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে উঠবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। রাজ্যের শান্তি শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি রক্ষায় পুলিশ কর্মীদের বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠানে 2022 সালের জন্য বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার প্রদান করা হয়। এরমধ্যে লাইফ টাইম অ্যাচিভার, ২০২২ পুরস্কার পান প্রাক্তন টিপিএস আধিকারিক প্রদ্যুৎ ভৌমিক, টিএসআর ব্যাটেলিয়নের মধ্যে সেরা ক্লারিকেল স্টাফ পুরস্কার পান সুবেদার অঞ্জন মজুমদার, সিভিল পুলিশ ইউনিটের মধ্যে সেরা ক্লারিকেল স্টাফ পুরস্কার প্রদান করা হয় এলডি ক্লার্ক রাজীব সিংহকে, ২০২২ সালের সেরা ইনভেস্টিগেটরের পুরস্কার পান খোয়াই থানার টিপিএস আধিকারিক রাজীব সূত্রধর, পুলিশম্যান অব দ্য ইয়ার পুরস্কার প্রদান করা হয় দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার দুলাল চন্দ্র দত্তকে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেরা থানার পুরস্কার প্রদান করা হয় খোয়াই থানাকে, বিট ব্যবস্থার জন্য সেরা থানার পুরস্কার দেওয়া হয় গোমতী জেলার বীরগঞ্জ থানাকে, ২০২২ সালের সেরা থানা হিসেবে পুরস্কার প্রদান করা হয় নিউ ক্যাপিটেল কমপ্লেক্স (এনসিসি) থানাকে, বিট ব্যবস্থার জন্য সেরা জেলা হিসেবে পুরস্কার প্রদান করা হয় ঊনকোটি জেলাকে, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা পুলিশের সেরা ইউনিট হিসেবে সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে পুরস্কার প্রদান করা হয়। টিএসআর ব্যাটেলিয়নের মধ্যে সেরা পুরস্কার পায় দ্বাদশ ব্যাটেলিয়ন এবং ২০২২ সালের সেরা জেলা হিসেবে পুরস্কার প্রদান করা হয় দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলাকে। পুরস্কার প্রাপক প্রত্যেকের হাতে পুরস্কারগুলি তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠানে টিএসআরের প্রথম, দ্বিতীয়, সপ্তম, দশম, একাদশ ব্যাটেলিয়নের জওয়ান, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ, মহিলা পুলিশ এবং হোমগার্ডের জওয়ানরা কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও টিএসআরের প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়নের এবং কেটিডিসির পুলিশ ব্যান্ড কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করে। পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিগনের মধ্যে পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন ও পুলিশের অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।