প্রাণীপালন কর্মসংস্থানের এক অন্যতম বিকল্প পথ। প্রাণীপালনের মাধ্যমে একটি পরিবার যেমন আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে পারে তেমনি রাজ্যও বিভিন্ন প্রাণীজ খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হতে পারে। আজ গোর্খাবস্তিস্থিত প্রজ্ঞাভবনে ভ্রাম্যমান কৃত্তিম গোপ্ৰজনন কর্মসূচিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের মধ্যে কৃত্তিম গোপ্ৰজনন সামগ্রী ও সাইকেল বিতরণ এবং ভ্রাম্যমান প্রাণী চিকিৎসা ভ্যানের সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা একথা বলেন। প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী ভগবান চন্দ্র দাস ও আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার। অনুষ্ঠানে ভ্রাম্যমান কৃত্তিম গো-প্রজননে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রাজ্যের ৪৬ জন কর্মীকে কৃত্তিম প্রজজনের সামগ্রী ও সাইকেল দেওয়া হয়। এছাড়া রাজ্যের ১৩টি প্রাণী চিকিৎসাকেন্দ্রে ১টি করে ভ্রাম্যমান প্রাণী চিকিৎসা ভ্যান দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা সহ অন্যান্য অতিথিগণ ভ্রাম্যমান কৃত্তিম প্রজননে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের হাতে এই সামগ্রী তুলে দেন এবং সেই সাথে পতাকা নেড়ে প্রাণী চিকিৎসা ভ্যানের সূচনা করেন।অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠানটি প্রাণীপালনে প্রাণী পালকদের মধ্যে খুবই উৎসাহ বাড়াবে। তিনি বলেন, প্রাণী আমাদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এই সম্পদকে সুরক্ষিত করার জন্য প্রাণী পালকদের পাশাপাশি সরকারেরও বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তাই সরকার নানা প্রকল্প বাস্তবায়ণের মধ্য দিয়ে প্রাণী পালকদের পাশে থাকার প্রয়াস করছে। আগামী দিনেও সেই প্রয়াস চালু রাখা হবে। তিনি বলেন, প্রাণী স্বাস্থ্যের উন্নতি ও সুরক্ষার দিকে লক্ষ্য রেখেই আজ রাজ্যে ৩টি ভ্রাম্যমান প্রাণী চিকিৎসা ভ্যানের সূচনা করা হল। তিনি মনে করেন এতে প্রাণী পালকগণ বিশেষভাবে উপকৃত হবেন। প্রতি প্রাণী পালকদের ঘরে প্রাণী চিকিৎসা পরিষেবা অতি সহজে বিনামূল্যে পৌছে যাবে। তিনি সমস্ত প্রাণী পালকদের এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করে নিজেদের গৃহপালিত প্রাণীদের সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখার আহ্বান জানান। সেইসাথে আগামী দিনে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলার সংকল্প গ্রহণ করারও আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথির বক্তব্যে প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী ভগবান চন্দ্র দাস বলেন, প্রাণী পালন এবং এর মাধ্যমে আর্থিক উপার্জন করা আমাদের দেশের এক প্রাচীন পেশা। এই সম্পদ সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখতে আমাদের সকলের সমান দায়িত্ব রয়েছে। রাজ্য সরকার সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আজকের এই অনুষ্ঠান তারই এক নিদর্শন। ভ্রাম্যমান প্রাণী চিকিৎসা ভ্যানের সূচনার ফলে রাজ্যের ৭৫ শতাংশ প্রাণীপালক উপকৃত হবেন। প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী আরও বলেন, ভ্রাম্যমান প্রাণী চিকিৎসা ভ্যানের জন্য রাজ্যে একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে। এর টোলফ্রি নাম্বার হচ্ছে ১৯৬২। এই নাম্বারে ফোন করলেই নিকটবর্তী প্রাণী চিকিৎসা কর্মীগণ এই ভ্যানের মাধ্যমে প্রাণী পালকদের কাছে পৌঁছে যাবেন। অনুষ্ঠানে প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী বলেন, সরকার রাজ্যের প্রাণীপালকদের বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে। প্রাণীপালকদের উৎসাহিত করতেই সরকার এসমস্ত কর্মসূচি নিয়েছে। রাজ্যের ৬ হাজার জন প্রাণীপালককে ভর্তুকীতে প্রাণী খাদ্য সংগ্রহের জন্য রেশন কার্ডও দেওয়া হচ্ছে। আজকের অনুষ্ঠানে অতিথিগণ আনুষ্ঠানিকভাবে কয়েকজন প্রাণীপালকের হাতে এই রেশন কার্ড তুলে দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধিকর্তা ড. কে শশিকুমার। বিশেষ অতিথি হিসাবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের প্রধান সচিব বিএস মিশ্র। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের অতিরিক্ত অধিকর্তা ড. বি কে দাস। আজ মোহনপুর, জিরানীয়া, কৈলাসহর, বিলোনীয়া, বগাফা, অমরপুর, সোনামুড়া, বিশালগড়, সালেমা, কুমারঘাট, কাঞ্চনপুর, খোয়াই ও তেলিয়ামুড়ায় ১৩টি প্রাণী চিকিৎসা কেন্দ্রে ভ্রাম্যমান প্রাণী চিকিৎসা ভ্যান দেওয়া হয়েছে।