আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে ২৬ শে নভেম্বর এই দিনটিতে এক উন্মত্ত ব্যক্তির হাতে শহীদ হয়েছিলেন তৎকালীন সময়ের খোয়াই থানার ইন্সপেক্টর সত্যজিৎ মল্লিক। ইন্সপেক্টর সত্যজিৎ মল্লিকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা হয় খোয়াই থানার পক্ষ থেকে। রবিবার সকাল ৯ টায় খোয়াই খানার উদ্যোগে শহীদ ইন্সপেক্টর সত্যজিৎ মল্লিককে উনার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানালো খোয়াই থানার পক্ষ থেকে থানা চত্বরে। এইদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার রতিরঞ্জন দেবনাথ, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ দাস, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রাজিব সূত্রধর, খোয়াই থানার ওসি রাজকুমার জমাতিয়া, খোয়াই মহিলা থানার ওসি মিনা দেববর্মা সহ খোয়াই থানার সমস্ত কর্মীরা। এই দিন শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে প্রদীপ উজ্জ্বল ও পুষ্পস্তবক দিয়ে শহীদ সত্যজিৎ মল্লিকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য প্রদান করেন জেলা পুলিশ সুপার রতি রঞ্জন দেবনাথ, এরপর একে একে বিভিন্ন পুলিশ আধিকারিক সহ খোয়াই থানার সমস্ত পুলিশ কর্মীরা একে একে ফুলের তোড়া ও পুষ্পস্তবক দিয়ে তাদের প্রিয় মল্লিক স্যারকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেন। এছাড়া এই অনুষ্ঠানে খোয়াই মহকুমার বিভিন্ন ব্যবসায়ী বৃন্দ সাধারণ মানুষ ও গুনগ্রহী সহ সংবাদপত্রের কর্মীরা পুষ্পর্গ দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানান। এরপর ইন্সপেক্টর সত্যজিৎ মল্লিকের বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনায় এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার রতিরঞ্জন দেবনাথ বলেন 26/11/2022 তিন তারিখে রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ খোয়াই থানাধীন শেওড়াতলী গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ দেবরায় নামে এক ব্যক্তি উন্মত্ত অবস্থায় প্রথমে নিজের দুই কন্যা সন্তান এক বছর ও সাত বছর এদেরকে হত্যা করে এরপর বড় ভাইকে শাবল দিয়ে হত্যা করে এরপর বীর চৌহমুনি এলাকায় রামচন্দ্র ঘাট থেকে আগত একটি অটু চালককে শাবল দিয়ে হত্যা করে। এই খবর পেয়ে যখন খোয়াই খানার ইন্সপেক্টর সত্যজিৎ মল্লিক ঐদিন ২৬ শে নভেম্বর রাত সাড়ে বারোটা নাগদ শেওড়াতলী বাজারে যান তখন দেখতে পান চারজনের খুনি প্রদীপ দেবরায় উন্মত্ত অবস্থায় হাতে শাবল নিয়ে বিবস্ত্রহীন ভাবে ঘোরাফেরা করছে শেওরাতালি বাজারে। প্রদীপ দেবরায় কে দেখে সত্যজিৎ মল্লিক এগিয়ে যান প্রদীপ দেবরায় কে আটকাতে বা তা সাথে কথা বলবে। কিন্তু সত্যজিৎ মল্লিক প্রদীপ দেবরায় এর সাথে কথা বলার আগেই প্রদীপ তার হাতের শাবল দিয়ে নৃশংস ভাবে সত্যজিৎ মল্লিককে খুন করে। রক্তাক্ত অবস্থায় সত্যজিৎ মল্লিককে জিবিতে নিয়ে গেলে চিকিৎসা চলাকালীন মারা যান। এরপর পুলিশ খুনি প্রদীপ দেবরায় কে আটক করে আদালতে তোলা হয়। এরপর ৩৩৩ দিন মামলাটি চলে খোয়াই এর এক আদালত। ঐদিন রাতে নৃশংস হত্যার ২৮ জন প্রত্যক্ষ দশিরা আদালতে তাদের স্বাক্ষর দান করেন। আদালতের বিচারপতি ২৮ জন স্বাক্ষ দাতাদের সাক্ষ্য ধানের ফলে প্রমাণিত হয় প্রদীপ দেব রায় ঐদিন রাতে পাঁচটি খুনের আসামি। তাই বিচারপতি প্রদীপ দেব রায় কে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলেন। এতে করে যদিও শহীদ সত্যজিৎ মল্লিকের পরিবার ন্যায় বিচার পেয়েছেন পাশাপাশি সত্যজিৎ মল্লিকের আত্মাও শান্তি পাবে বলে মনে করেন জেলা পুলিশ সুপার অতিরঞ্জন দেবনাথ। পুলিশ সুপার এও বলেন একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ এবং সত্যি একজন ভালো অফিসার ছিলেন সত্যজিৎ মল্লিক। উনার প্রয়াণে খোয়াই জেলার আরক্ষা প্রশাসনের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল বলে মন্তব্য করেন। শুধু তাই না শহীদ সত্যজিৎ মল্লিক খোয়াই থানাতে কর্মরত অবস্থায় যেমন সুনাম কামিয়েছেন পাশাপাশি অনেক গুণগ্রহী তৈরি করে গেছেন তার প্রমাণ মিলে ছিল সত্যজিৎ মল্লিক এর মৃতদেহ 27 শে নভেম্বর খোয়াই থানায় নিয়ে আসা হয় শেষ শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর জন্য সবার প্রিয় অফিসার টিকে শেষবারের মতন দেখতে ও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে তখন থানা প্রাঙ্গনে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে আসা উপস্থিত পুলিশ কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকেও চোখের জল ফেলতে দেখা। এর থেকে বুঝা যায় সত্যজিৎ মল্লিকের উপর মানুষের ভালোবাসা ছিল অনেক। এই দিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি বিষয়ে খোয়াই মহাকুমার বিভিন্ন নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীরা খোয়াই থানার ওসি রাজকুমার জমাতিয়া কে অসংখ্য ধন্যবাদ জানান এই শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন অনুষ্ঠানটি করার জন্য। এ ধরনের অনুষ্ঠান খোয়াই থানায় আর কোনদিন হয়নি। এই থানাতে ৯০ দশকের শেষের দিকে এক শনিবার সন্ধ্যায় শনি পূজা চলাকালীন উগ্রবাদীদের বোমার হামলায় এক সাব ইন্সপেক্টরের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন খোয়াই থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকরা ডিউটি চলাকালী সাব ইন্সপেক্টরের মৃত্যুতে কোন ধরনের শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করেনি। কিন্তু বর্তমান সমযের খোয়াই থানার ওসি রাজকুমার জমাতিয়ার উদ্যোগে এই শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হওয়াতে খোয়াই বাসি ওসিকে ধন্যবাদ জানান।



