রাজ্যে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নে বিশেষ সাফল্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সম্প্রতি প্রকাশিত এনএফএস – এ স্টেট র্যাঙ্কিং ইনডেক্স -২০২২ সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে ত্রিপুরা ১৪ টি স্পেশাল ক্যাটাগরি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে প্রথম স্থান ও দেশের মধ্যে পঞ্চম স্থানে রয়েছে । আজ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ সংবাদ জানান খাদ্য , জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কান্তি দেব । সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী শ্রীদেব খাদ্য , জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের উল্লেখযোগ্য সাফল্য ও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচিসমূহ তুলে ধরে জানান , বর্তমান সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় এসে রেশনশপের মাধ্যমে এপিএল ভুক্ত পরিবার পিছু সর্বোচ্চ ২৫ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । যা আগে ২০ কেজি করে দেওয়া হতো । বর্তমানে এপিএলভুক্ত পরিবারগুলি সর্বোচ্চ ২৫ কেজি করে চাল পাচ্ছেন । তিনি জানান , রাজ্যে রেশনশপের মাধ্যমে ভোক্তাদের সয়াবিন দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে । চিনি , ডাল এবং ত্রিপুরেশ্বরী চা পাতাও রেশনশপের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে । পাশাপাশি স্বসহায়ক গোষ্ঠীর পণ্য সামগ্রীও রেশনশপের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে খাদ্যমন্ত্রী জানান । তিনি বলেন , রাজ্যে গণবন্টনে ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ এবং সুবিন্যস্ত করার লক্ষ্যে বর্তমান রাজ্য সরকার সচেষ্ট । রেশনশপগুলিতে ই – পস মেশিন বসানোর ফলে রাজ্যে ৬২ হাজার ভূয়ো রেশনকার্ড সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে । এই ৬২ হাজার ভুয়ো রেশনকার্ডে ২,৮১,০০০ মানুষের নাম নথিভুক্ত ছিল । এজন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রতি মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা লোকসান হতো । সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী জানান , বর্তমান সরকার রাজ্যের কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কৃষি দপ্তর এবং এফসিআই – এর সহযোগিতায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে খারিফ মরশুমে রাজ্যের কৃষকদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়কমূল্যে ধান কেনা শুরু করে । ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে রাজ্যে মোট ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৭২১ মেট্রিকটন ধান কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হয়েছে এবং সহায়কমূল্য বাবদ কৃষকদের মোট ২৪৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে । তিনি জানান , প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় প্রথম পর্যায়ে এপ্রিল ২০২০ থেকে নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত রাজ্যে মোট ৯৫ হাজার ২৫ মেট্রিকটন চাল এবং মোট ৪ হাজার ৩৮১ মেট্রিকটন ডাল বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় । পরবর্তীতে মে ২০২১ থেকে এই স্কীমটি পুনরায় চালু করা হয় । দ্বিতীয় পর্যায়ে জুলাই , ২০২২ পর্যন্ত গত পনের মাসে রাজ্যের প্রায় ৫ লক্ষ ৯৬ হাজার এনএফএসএ পরিবারকে ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৩১ মেট্রিকটন চাল বিনামূল্যে এই প্রকল্পে প্রদান করা হয়েছে । গণবন্টনের অধীনে এসপিরেশনাল জেলা হিসেবে রাজ্যের ধলাই জেলায় এপ্রিল ২০২২ থেকে ফর্টিফায়েড চাল বিতরণ করা হচ্ছে । পর্যায়ক্রমে রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলিতে এই চালের বিতরণ করা হবে বলে খাদ্য মন্ত্রী জানান । হাজার সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী জানান , রাজ্য সরকার গণবন্টন ব্যবস্থাকে আরও সহজে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে জনবসতির ভৌগোলিক অবস্থানের সুবিধার ভিত্তিতে রাজ্যে ৪০৮ টি নতুন রেশন দোকান চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । এখন পর্যন্ত ২৩৯ টি নতুন রেশন দোকান খোলা হয়েছে । এই ক্ষেত্রে ডিলারশীপ প্রদানে মহিলাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে । তিনি আরও জানান , জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের বাইরে থাকা ১ হাজার ৬৮ টি এপিএল চা শ্রমিক পরিবারকে নতুনভাবে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় আনা হয়েছে । রাজ্যে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসিত রিয়াং শরণার্থী পরিবারদের গণবন্টনের আওতায় আনার উদ্যোগ হিসেবে এখন পর্যন্ত মোট ৪৮০ টি রিয়াং শরণার্থী পরিবারকে অন্ত্যোদয় ব্লু রেশনকার্ড দেওয়া হয়েছে । রাজ্যের গণবন্টন ব্যবস্থার আওতাধীন স্টোরেজ পরিকাঠামোর আরও উন্নতিকরণের লক্ষ্যে সেন্ট্রাল স্পনসরড স্কীমে জিরানীয়ার বেলবাড়ি ও উদয়পুরের চন্দ্রপুরে যথাক্রমে ৫০০ মেট্রিকটন ও ১,০০০ মেট্রিকটন স্টোরেজ ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি গোডাউন তৈরীর কাজ শেষ হয়েছে এবং শীঘ্রই তা চালু করা হবে । তাছাড়া মোট ২,৫০০ মেট্রিকটন স্টোরেজ ক্ষমতা সম্পন্ন আরও ৪ টি নতুন গোডাউন তৈরীর কাজ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে । রাজ্যের মোহনপুর ও লংতরাইভ্যালী মহকুমায় লিগ্যাল মেট্রোলজি অর্গানাইজেশনের ২ টি ওয়ার্কিং স্ট্যান্ডার্ড ল্যাব চালু করা হয়েছে । খাদ্যমন্ত্রী জানান , প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা চালু হওয়ার পর থেকে রাজ্যে এখন পর্যন্ত মোট ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ৮৫৪ টি পরিবারে গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হয়েছে । এরমধ্যে মার্চ ২০১৮ সালের পরে ২ লক্ষ ৪৩ হাজার ৩৫৪ টি গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে । রাজ্যের জনগণের সুবিধার্থে রেশনকার্ড সম্পর্কিত পরিষেবা প্রদানের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে রাজ্যে সম্প্রতি রেশনকার্ডের জন্য একটি ই – পরিষেবা মাধ্যম চালু করা হয়েছে । তাছাড়াও রাজ্যে ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড বাস্তবায়িত হচ্ছে ।



