প্রবীণরা সমাজের পথ প্রদর্শক। প্রবীণদের সৎ পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা গ্রহণ করলে সমাজ, রাজ্য ও দেশ উপকৃত হবে। আজ যারা নবীন তার একদিন প্রবীন হবেন। তাই প্রবীণদের আশ্রয়ে নতুন নতুন বৃদ্ধ আশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রম গড়া নয়, এই সামাজিক ব্যাধি থেকে সমাজকে বেড়িয়ে আসতে হবে। প্রবীণদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে হবে। তবেই আজ আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উদযাপন সার্থক হয়ে উঠবে। আজ মুক্তধারা অডিটোরিয়ামে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী টিস্কু রায় একথা বলেন। উল্লেখ্য, এবছর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের মূল ভাবনা হচ্ছে- ‘মর্যাদার সাথে বার্ধক্যঃ বিশ্বব্যাপী বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য যত্ন এবং সহায়তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উপর গুরুত্ব’। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী টিস্কু রায় বলেন, প্রবীণরা হলেন একটি পরিবারের মূল চালিকাশক্তি। তাই তাদের কখনও অবজ্ঞা করা উচিত নয়। তাদের সৎ পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তাদের শ্রদ্ধা করতে হবে। এ কাজটি নিজ নিজ ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। তাই বিভিন্ন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের যে আশ্রয় এই সামাজিক ব্যাধি ধীরে ধীরে দূর করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্য সরকার পরিচালিত মহাত্মা গান্ধী স্মৃতি ওল্ড এইজড হোম ও আশ্রয় ওল্ড এইজড হোম রয়েছে। এছাড়া রাজ্যে এনজিও পরিচালিত ৬টি হোম রয়েছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার প্রবীণদের কল্যাণ, দিব্যাঙ্গজনদের আর্থ-সামাজিক মানোন্নয়ন, গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি প্রদান, বালিকা বিবাহ রোধ ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে রাজ্যে প্রায় ৪০ হাজার দিব্যাঙ্গ রয়েছেন। এরমধ্যে ৩০ হাজার জনের মধ্যে ইউডিআইডি কার্ড বিতরণ করা হয়ছে। ১ লক্ষ ৬৫ হাজার ১৩ জন প্রবীণকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মাত্র বন্দনা যোজনায় এবং মুখ্যমন্ত্রী মাত্র পুষ্টি উপহার প্রকল্পে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার প্রদান করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আগরতলার পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার বলেন, প্রবীণদের জন্য মানুষের মনে সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধার মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হবে। “লিগ্যাল প্রভিশনস ফর সিনিয়র সিটিজেন” বিষয়ে আলোচনা করেন আইন দপ্তরের উপসচিব শঙ্খ শুভ্র দত্ত। তিনি পিতা-মাতা এবং প্রবীণ নাগরিকদের রক্ষণাবেক্ষণ ও কল্যাণ সংক্রান্ত আইন-২০০৭ বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা তপন কুমার দাস। উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ডা. বিশাল কুমার। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের পক্ষ থেকে জিলা শ্রেষ্ঠ ৯০ বছর উর্দ্ধ প্রবীণ সন্মান ভূষণ চন্দ্র দাসকে, জিলা শ্রেষ্ঠ ৭০ বছর উর্দ্ধ প্রবীণ কর্মজীবন সন্মান নিত্যানন্দ আচার্যকে, জিলা শ্রেষ্ঠ ৬০ বছর উর্দ্ধ প্রবীণ সৃজনকলা সম্মান প্রদীপ দাসকে এবং জিলা শ্রেষ্ঠ ৬০ বছরের উর্দ্ধ সুভাষ গন চৌধুরীকে প্রবীণ সাহসিকতা সন্মানে ভূষিত করা হয়। তাঁদের প্রত্যেককে দেওয়া হয় শংসাপত্র, স্মারক ও ৫ হাজার টাকার চেক। সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী সহ অতিথিগণ তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি বিশ্বজিৎ শীল।