রাজ্য সরকার রাজ্যে বাঁশ চাষ সম্প্রসারণ, বাঁশচাষি এবং হস্তকারু শিল্পীদের আর্থসামাজিক মান উন্নয়নে নানা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বাঁশ চাষে সহজে আত্মনির্ভর হওয়া যায়। বাঁশভিত্তিক শিল্পকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এগিয়ে নিতে পারলে ত্রিপুরার অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী সান্তনা চাকমা আজ প্রজ্ঞাভবনের ৩নং হলে আয়োজিত ‘বিশ্ব বাঁশ দিবস’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন। ত্রিপুরা ব্যাম্বো মিশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এবছর বিশ্ব বাঁশ দিবসের মূল ভাবনা হলো ‘নেক্সট জেনারেশন ব্যাম্বো: সলিউশন, ইনোভেশন এন্ড ডিজাইন’। এই দিবসের উদ্বোধন করে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা উদ্যোক্তাদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, রাজ্যে প্রায় ৪২০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৩ রকমের বাঁশ চাষ হয়। রাজ্যে প্রায় ১ লক্ষ লোক বাঁশ চাষের সাথে যুক্ত রয়েছেন। ত্রিপুরায় বাঁশ শিল্প থেকে বছরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। তাই এই শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। তাই এই শিল্পের সাথে যুক্ত শিল্পীদের নিত্য নতুন ডিজাইনে পণ্য সামগ্রী তৈরী করতে হবে। শিল্পীদের সহায়তায় মুখ্যমন্ত্রী আগরবাতি আত্মনির্ভর স্কিম চালু করা হয়েছে। অনেক শিল্পী এই স্কিমের সহায়তা নিয়ে বাঁশের বোতল, টাইলস সহ অন্যান্য সামগ্রী তৈরী করেছেন। এর চাহিদাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাই কেবল জনজাতি এলাকায় নয়, রাজ্যে বাঁশ চাষের এলাকা বাড়াতে হবে। জাতীয় ব্যাম্বো মিশন ৬০ শতাংশ ভর্তুকিতে সুবিধাভোগীদের ঋণ দেয়। তিনি বলেন, ধূপকাঠির শলা তৈরী করার জন্য উত্তর ও ঊনকোটি জেলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। বোধজংনগরে ব্যাম্বো পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। ঊনকোটি জেলায় ব্যাম্বো পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি শিল্পীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলেই সফলতা আসবে। উত্তর পূর্বাঞ্চল পর্ষদ, রাজ্য সরকার, নাবার্ড, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক, ন্যাশনাল ব্যাম্বো মিশন, ত্রিপুরা ব্যাম্বো মিশন ও ইন্দো-জার্মাণ প্রজেক্টের মাধ্যমে বাঁশ চাষিদের বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করা হবে।
শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে বলেন, রাজ্যের যেখানে যেখানে বাঁশ চাষের সম্ভাবনা রয়েছে সেস্থানগুলি চিহ্নিত করণের কাজ চলছে। চাকমাঘাট ব্যাম্বো ডিপো পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক প্রজেক্টে রাজ্যের ৮ জেলায় ব্যাম্বো সেক্টরের উন্নয়নে ডিপিআর তৈরীর কাজ চলছে। এছাড়া বক্তব্য রাখেন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনসংরক্ষক আর কে শ্যামল এবং ইন্দো-জার্মান প্রজেক্টের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ডব্লিও ভূটিয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা ব্যাম্বো মিশনের মিশন ডিরেক্টর এস প্রভু। তিনি অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল ব্যাম্বো মিশন ও ত্রিপুরা ব্যাম্বো মিশনের ২০২৪- ২৫ অর্থবছরের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠান শেষে শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রী সহ অতিথিগণ রোলম্যাট তৈরীর কারিগর জোৎস্না দেবনাথ সহ মোট ১৮ জন গ্রামীণ শিল্পীকে উত্তরীয় ও মেমেন্টো দিয়ে পুরস্কৃত করেন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে ত্রিপুরা ব্যাম্বো মিশনের এমডি এস প্রভু, বন দপ্তরের এমডি প্রসাদ রাও, হস্ততাঁত, হস্তকারু ও রেশম শিল্প দপ্তরের অধিকর্তা ড. অরুণ কুমার সহ বিভিন্ন ব্যাঙ্কের আধিকারিকগণ বাঁশ, বেত, কারু শিল্প উদ্যোগী, বাঁশ উৎপাদনকারী ও কারিগরদের সাথে মতবিনিময় করেন। সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ত্রিপুরা ব্যাম্বো মিশনের অতিরিক্ত এম ডি এস সি দাস।