শুক্রবার দুপুরে খোয়াই পুরাতন টাউন হলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপ্ত হলো খোয়াই পুর পরিষদের উদ্যোগে চারদিন ব্যাপী আন্ত বিদ্যালয় ভিত্তিক একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতার। দুসরা মে থেকে এই একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল যার সমাপ্তি ঘটে ৫ই মে শুক্রবার। এই প্রতিযোগিতায় খোয়াই শহরের নয়টি স্কুল অংশগ্রহণ করে। এদিন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহকুমা শাসক বিজয় সিনাহা, খোয়াই জিলা পরিষদের সদস্য সুব্রত মজুমদার, পুর চেয়ারম্যান দেবাশীষ নাথ শর্মা ও বিভিন্ন কাউন্সিলররা এছাড়া প্রতিযোগিতায় যোগদানকারী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাছাড়া এই একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে ছিলেন তিনজন স্থানীয় অভিপ্রসাদ চক্রবর্তী, তেলিয়ামুড়া থেকে মনোরঞ্জন গোপ, এবং কল্যাণপুর থেকে জয়ন্ত ভট্টাচার্য তাদেরকে মঞ্চে পুর পরিষদের পক্ষ থেকে উত্তরীয়ও ফুলের তোড়া এবং মানপত্র দিয়ে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। এরপর চার দিনব্যাপী একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতার বিভিন্ন নাটক গুলিকে নিয়ে আলোচনা করেন জয়ন্ত ভট্টাচার্য। সার্বিকভাবে প্রত্যেকটি নাটকের কি কি ভুল ত্রুটি হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন জয়ন্ত ভট্টাচার্য তিনি এও বলেন এটি শুধু আলোচনা না এটি একটি পর্যালোচনা যাতে করে অদূর ভবিষ্যতে খুদে শিল্পীরা তাদের ভুল ভ্রান্তিকে শুধরে নিয়ে আরো সুন্দর নাটক উপস্থাপন করে সেই বিষয়ে আলোচনা চক্র। শেষে বিচারকদের পক্ষ থেকে নাটক পরিচালনা কমিটির হাতে বিচারকদের রায় তুলে দেন এবং পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে সবার সামনে বিচারকদের রায়ের খামটি খুলে একে একে ঘোষণা ঘোষণা করতে থাকেন। চারদিন ব্যাপী আন্ত বিদ্যালয় একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীর স্কুল ছিল মোট ৯টি এরমধ্যে নাটক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে খোয়াই শরৎচন্দ্র দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে খোয়াই সরকারি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়, এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করে সরকারি দ্বাদশ শ্রেণীর বালিকা বিদ্যালয়। সেরা পান্ডুলিপির পুরস্কার পায় শরৎচন্দ্র দর্শনীয় বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গণেশ দেবরায়। রূপসজ্জায় সেরা পুরস্কার পান কুন্তল নাথশর্মা, সেরা পরিচালক অসীম কুমার দেব শরৎচন্দ্র দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় থেকে, আবহাওয়া সংগীতে শ্রেষ্ঠ স্থান পায় দেবব্রত পাল, সেরা মঞ্চ হিসেবে যুগ্মভাবে পুরস্কার পান খোয়াই ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের অভিজিৎ পাল ও রুদ্র ঘোষ। অন্যদিকে সেরা অভিনেতা হিসেবে তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয় অভিনেতা হিসেবে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পান সরকারি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় এর ছাত্র সরজিত পাল, দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পান শরৎচন্দ্র দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় এর ছাত্র প্রীতম পাল তৃতীয় পুরস্কার পান ডিরোজিও স্কুলের ছাত্র জয়দ্রত চৌধুরী। অন্যদিকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে তিনজনের নাম ঘোষনা করা হয় এর মধ্যে প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী খোয়াই-সরকারি দ্বাদশ শ্রেণী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী সাগরিকা দাস, দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পান শরৎচন্দ্র দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় এর ছাত্রী নন্দিতা আচার্জী, এবং তৃতীয় পুরস্কার পান পহরমুড়া দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের ছাত্রী রেশমি পাল। একাঙ্ক নাটক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ব্যাপক উৎসাহ পরিলক্ষিত হয় এবং যারা যারা পুরস্কৃত হয়েছেন তাদের প্রত্যেকের প্রতি ছাত্রছাত্রীরা করতালির মাধ্যমে পুরস্কার প্রাপকদের অভ্যুতরা জানান। এর থেকে বোঝা যায় এখনো কচিকাঁচা এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নাটকের দৃষ্টিকোণ নাটক নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং নাটকের প্রতি যে অনুরাগ রয়েছে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটতে দেখা গেছে আজ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। আর একে কেন্দ্র করেই অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি খোয়াই জিলা পরিষদের সদস্যরা সুব্রত মজুমদার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন দীর্ঘ বছর নাটক নিয়ে কোন আলোচনা পর্যালোচনা করা হয়নি খোয়াইতে। সংস্কৃতি ও নাটকের শহর হিসাবে পরিচিত খোয়াই কিন্তু বিগত কয়েক বছর সেই নাটক নিয়ে কোন উন্মাদনা দেখতে পাওয়া যায়নি যদিও ২০১৮ সালে রাজ্যে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর নাটক কে কিভাবে জনমুখী করা যায় সে নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন কিন্তু মহামারী করুনার জন্য বিগত আড়াই বছর তা করা সম্ভব হয়নি। তাই নাটককে বাঁচিয়ে রাখতে খোয়াই পুর পরিষদ এগিয়ে এসেছে তাতে নটি স্কুল অংশগ্রহণ করে। নাটক আমাদের সমাজকে সঠিক শিক্ষা প্রদান করে এবং সমাজ সংস্কারের জন্য নাটক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। শুধু তাই না সমাজকে পরিষ্কার এবং আবর্জনা মুক্ত করতে নাটক খুবই জরুরী এবং সমাজের জন্য একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে কাজ করে নাটক। যদিও পুরো পরিষদের পক্ষ থেকে নাটকের বিষয়বস্তু বেঁধে দেওয়া হয়েছিল স্বচ্ছ ভারতের উপর। তার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন স্কুল নাটক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং তাদের নাটক উপস্থাপন করেন। এও দেখা গেছে নাটকের বিষয়বস্ত স্বচ্ছ ভারত থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ স্কুলগুলির নাটকের বিষয়বস্তু ছিল নেশা বিরোধী অভিযানের উপর যা বিচারকদেরও মন কেড়েছে বলে মন্তব্য করেন সুব্রত মজুমদার। তিনি এও বলেন এটা সত্যি কথা বর্তমান সময়ে নবপ্রজন্মরা নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে তারই প্রতিফলন অনেকগুলি নাটকে উপস্থাপন করা হয়েছে সূচারু ভাবে। আর বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজের যুবকরা যেভাবে নিজেদেরকে শেষ করে দিচ্ছে বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে এই বিষয়গুলি যদি আগামী দিন নাটকের মাধ্যমে মঞ্চস্থ করা যায় বিভিন্ন স্থানে তাহলে হয়তো নাটকের মাধ্যমে নেশায় আসক্ত যুব সমাজকে কিছুটা হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যাবে বলে মনে করেন খোয়াই জিলা পরিষদের সদস্য সুব্রত মজুমদার। আর আগামী দিন এই নাটকে ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন।



