Thursday, November 13, 2025
বাড়িখবরশীর্ষ সংবাদ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে মনিপুরী মহিলাদের দ্বারা সংঘটিত ইংরেজদের সাথে মহিলাদের যুদ্ধের নুপীলান নামক...

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে মনিপুরী মহিলাদের দ্বারা সংঘটিত ইংরেজদের সাথে মহিলাদের যুদ্ধের নুপীলান নামক মেমোরিয়াল ষ্টেচুর’ পূর্ণাবয়ব স্থাপিত হল খোয়াই গৌরনগর গ্রামে

আজ থেকে ৮৪ বছর আগে ব্রিটিশ সরকারের আমলে ব্রিটিশ সরকারের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তৎকালীন সময় ভারতবর্ষের ছোট্ট মনিপুর রাজ্যের মনিপুরী মহিলারা বিদ্রোহ করে এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিল তৎকালীন সময়ে। রবিবার বিকালে “নুপীলান নী্ংশিং মীতম”বা ওমেন ওয়ার, (নারী বিদ্রোহের) স্মৃতি রক্ষার্থে খোয়াই গৌর নগর বাজার এলাকাতে সেই নারী বিদ্রোহের পূর্ণাবয়ব মূর্তি স্থাপনের অনুষ্ঠানে আলোচনা রাখতে গিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথী খোইসনাম বিড়লা বলেন আজ থেকে ৮৪ বছর আগে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে 12 ই ডিসেম্বর উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজন্য শাসিত ছোট রাজ্য মনিপুরের নারীদের সম্মিলিতভাবে ব্রিটিশ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংঘটিত করেছিলেন। এটাই ইতিহাসে নুপীলান (নারী বিদ্রোহ) নামে ইতিহাস বিখ্যাত। তৎকালীন সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী বল প্রয়োগ করে ও গুলি চালিয়ে নারীদের এই আন্দোলনকে স্তিমিত করেছিলেন ঠিকই কিন্তু নারীদের এই আন্দোলনের ফলে রাজন্য শাসিত মণিপুরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় মান আমূল পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছিল। পৃথিবীর নারী আন্দোলনের ইতিহাসে মণিপুরের এই নারী বিদ্রোহ আজও স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। প্রতিবছর ১২ই ডিসেম্বর এই দিনটিকে নুপীলান দিবস অর্থাৎ নারী বিদ্রোহ দিবস নামের শ্রদ্ধার সাথে পৃথিবীর সর্বত্র যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করা হয়। পরবর্তীতে মনিপুরী লিতরেরী এন্ড কালচার ফোরাম এর ত্রিপুরার কনভেনার খোইসনাম বিড়োলা বলেন ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে ঈঙ মনিপুর যুদ্ধে মনিপুর রাজ বাহিনী ইংরেজদের কাছে পরাজয়ের পর ব্রিটিশ রাজ ক্ষমতা দখল করে পরোক্ষভাবে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করতে থাকে। শাসন ক্ষমতা দখল করে ব্রিটিশ রাজাকে হাতের পুতুলে পরিণত করে। এবং নতুন নতুন নীতিমালা জারি করে ব্রিটিশ সরকার মনিপুরী প্রজাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে রায় জোর কদমে। মনিপুরী সৈন্যদের নিরস্র করে ব্রিটিশ বাহিনীর মালপত্র বহনের কাজে লাগিয়ে দেয় বিনা বেতনে। এরপর প্রজাদের উপর উচ্চ হাড়ে কর চাপানো হয়। কৌশলে ব্রিটিশ বাহিনী ঈঙ মনিপুরী যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ মণিপুরের প্রজাদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের কৌশল অবলম্বন করে। ব্রিটিশ সরকারের আর্থিক ও মানসিক নির্যাতনে মনিপুরী বাসীদের জীবনযাত্রার মান ক্রমশ দুঃসহনীয় হয়ে ওঠে। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ইম্ফলে অবস্থিত ব্রিটিশ পলিটিক্যাল এজেন্ট এর বাংলো রাতের অন্ধকারে কে বা কারা পুড়িয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে প্রজাদের উপর ব্যাপক নির্যাতন করে। পাহাড় থেকে বাস, ছন সংগ্রহ করে বাংলা টিকে পুনঃনির্মাণ করার আদেশ জারি করে। সমস্ত অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন ব্রিটিশ সেনা বাহিনীর অত্যাচার ও নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচতে মনিপুরী পুরুষগণ আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়। তখন মনিপুরের হাজার হাজার সচেতন মণিপুরী মহিলারা প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় নেমে সরকারের কূটনীতি অত্যাচারী মনোভাবাপণ্য আদেশগুলিকে প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন এটা মণিপুরের ইতিহাসে প্রথম (নুপীলান) বা নারী বিদ্রোহ নামে বিখ্যাত। এরপর থেকে মনিপুরের সমস্ত মহিলারা ক্রমে ক্রমে নিজেদের সঙ্ঘবদ্ধ করতে থাকে। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকারের জারি করা ফ্রি ট্রেড অর্থাৎ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য পলিসির কারণে মনিপুরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হতে থাকে। মনিপুর রাজ্য থেকে প্রচুর খাদ্যশস্য ও দানা অন্যত্র রপ্তানির ফলে একসময় মনিপুর রাজ্যে প্রবল খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এতে করে প্রজারা অনাহারে ও অর্ধাহারে দিন যাপন করতে থাকে। পরবর্তীতে এই আন্দোলন মনিপুরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। নিরস্র মণিপুরী মহিলারা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বন্দুকের নলের সম্মুখে আকুতোভয়ে বড় সাহেবের বাংলা ঘেরাও করে তাদের সেই আদেশকে প্রত্যাহার দাবি জানায়। শেষে আন্দোলনের তীব্রতা ক্রমশ বাড়তে থাকে দেখে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীরা বন্দুকের বাট ও নেয়ানট দিয়ে নিরস্ত্র মহিলাদের উপর নির্মমভাবে আঘাত করে আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। রাজ্যব্যাপী সম্মিলিত মনিপুড়ি মহিলাদের তীব্র আন্দোলনের চাপে পড়ে শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে ব্রিটিশ কোম্পানি খাদ্যশস্য রপ্তানির আদেশ কে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। শেষে এই আন্দোলনের ফলে মণিপুর সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আমুল পরিবর্তন ঘটে। দেশ,জাতি ও সমাজের স্বার্থে মহিলাদের এই আত্মত্যাগ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। যে ভাবে বিভিন্ন সময়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মনিপুরী মহিলারা অস্ত্রের সামনে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল সেটা খুবই প্রশংসনীয়। যদিও অতিথিরা রবিবারের বিকেলের গৌরনগর এলাকায় উক্ত অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন দেশ ও জাতীয় স্তরে আত্মত্যাগী মহিলাদের সম্মানে এই বিদ্রোহের পূর্ণাবয়ব মর্মর মূর্তি তথা মণিপুরী মহিলা বিদ্রোহের প্রতিমূর্তি মনিপুর সরকারের ব্যবস্থাপনায় ইম্ফল শহরের প্রাণকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। সমাজ সংস্কারে মণিপুরী মহিলাদের এই দায়বদ্ধতা মনোভাব প্রতি সম্মান প্রদর্শন শ্রদ্ধাঞ্জলি স্বরূপ মহিলা বিদ্রোহের পূর্ণাবয়ব মূর্তিটি মনিপুর রাজ্যের বাইরে ত্রিপুরা রাজ্যের খোয়াই মহকুমার মনিপুরী অধ্যুষিত এলাকা গৌরনগর গ্রামে স্থাপন করতে পেরে অতিথিরা খুবই উৎফুলিত। এই কাজটি করার ক্ষেত্রে এলাকার বিশিষ্টজনারা সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই মর্মরমূর্তি স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার আন্দোলনে মহিলারা যে পিছিয়ে ছিল না সেটা একটি বিরাট নিদর্শন ছিল। এই দিন অনুষ্ঠান মঞ্চে মনিপুর থেকে আগত বিভিন্ন অতিথিবৃন্দ এবং এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদেরকে তাদের চিরাচরিত প্রথা তথা নিজ হাতে তৈরি করা গামছা ও পদ্ম ফুল দিয়ে বরণ করে নেন যেটা তাদের ট্রেডিশনাল আচরণ এছাড়া মনিপুরী সমাজের উৎসবের চিরাচরিত প্রথা হিসেবে গ্রামের মহিলারা তাদের চিরাচরিত বেশভূষা পরে গামলায় মাথায় করে চাল ,ডাল সবজি, বিভিন্ন ফল ফসারি নিয়ে এসে অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে জরো করে রাখে তাদের এই প্রথাকে সিদা কাবা বলে জানান অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা। মনিপুরী সম্প্রদায়ের মহিলাদের আন্দোলনের ওমেন ওয়ার মেমোরিয়াল স্ট্যাচু গৌরনগর গ্রামে স্থাপনের ফলে গৌর নগর বাসি ব্যাপক খুশি ।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

13 + five =

- Advertisment -spot_img

জনপ্রিয় খবর

সাম্প্রতিক মন্তব্য